বর্ষাকালে মশা থেকে নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনীয় কিছু টিপস
বর্ষাকালের ঝুঁকি সম্পর্কে নিজে জানুন, পরিবার এবং বন্ধুদের জানান:
- বর্ষা ঋতুতে প্রস্তুতির মাধ্যমে, আমরা ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং এই সময়ে সৃষ্ট অন্যান্য বিপদের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারি। প্রত্যেকে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে যেন সচেতন থাকে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় কি তা জেনে নিশ্চিত হতে হবে। পরবর্তীতে, আপনি যা জেনেছেন তা আপনার কমিউনিটিতে শেয়ার করুন!
মশা ডিম পাড়তে পারে এমন জায়গা বিনষ্ট করুন:
- বর্ষা হল মশা’র প্রজননের উপযুক্ত সময়। মশারা সাধারনতঃ স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। স্থির পানি হলো সেই পানি যা প্রবাহমান নয়, যেমনঃ পুকুর বা জলাশয়ের পানি ।মশা দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলি এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল, যেখানে বা যেসব জায়গায় মশা ডিম পারে সেসব নষ্ট করা/ধ্বংস করে ফেলা। করণীয়:
- জলাবদ্ধ পানি অপসারণ করুন: স্থির পানি পরিষ্কার বা নোংরা যাই হোক না কেন সেটা মশার ডিম পাড়ার সর্বোত্তম স্থান। আপনার বাড়ির চারপাশে থাকা কোন পাত্রে, বালতি এবং অন্যান্য জায়গা থেকে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন।
- মশার ডিম নষ্ট করতে পানি রাখার জায়গা স্ক্রাব করুন এবং প্রয়োজনে পাত্র খালি রাখুন: বালতি, টায়ার, আবর্জনার পাত্র, পুল বা ফুলের টবের মতো পাত্র যা বৃষ্টির পানি ধরে রাখে এমন সব পাত্র ফেলে দিন অথবা উল্টে বা একেবারে খালি রাখুন।
- পানির পাত্রগুলি ঢেকে রাখুন: পানি সংরক্ষণে ব্যবহৃত পাত্র (বালতি, ড্রাম বা ট্যাঙ্ক) সবসময় একটি শক্ত ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। ছোট ছিদ্রযুক্ত আঁটসাঁট ঢাকনা, পর্দা বা তারের জাল ব্যবহার করুন যাতে মশা ঢুকতে এবং ডিম পাড়তে না পারে।
- নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখুন: নিয়মিত ড্রেন এবং নর্দমা পরিষ্কার করুন। বাড়ি থেকে পানি অপসরানোর জন্য যা ব্যবস্থা সেখানে অসাবধানতাবশতঃ পানি আটকে থাকতে পারে, যা মশার ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ জায়গা।
- আবর্জনা ঠিকভাবে অপসারণ করুন/সরিয়ে ফেলুন: পুরানো টায়ার, বোতল এবং ক্যানের মতো পাত্রগুলোতে মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। তাই, নিয়মিত আপনার চারপাশ (যেমন, বাগান, উঠান এবং বাইরে রাখা আসবাবপত্র, ফুলের টব এবং ফুলদানি সাধারনত যেখানে ময়লা আটকে থাকে) পরিষ্কার করুন । এতে করে মশার ডিম পাড়ার সাম্ভাব্য জায়গা নষ্ট হয়।
মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড় থেকে নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুনঃ
- মশা নিরোধক ব্যবহার করুনঃ বৈদ্যুতিক, কয়েল বা স্প্রে (ত্বকের জন্য ব্যবহারে অনুমোদিত) ব্যবহার করুন এবং সম্ভব হলে সবসময় লম্বা-হাতা শার্ট, প্যান্ট পরুন।
- কীটনাশক প্রয়োগে সতর্ক থাকুনঃ কীটনাশক ব্যবহারে নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করুন।ত্বকের উপরিভাগে রেপিলেন্ট স্প্রে করবেন না/স্প্রে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- সবসময় মশারি ব্যবহার করুন: সকাল এবং সন্ধ্যায় মশারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, তাই খেয়াল রাখুন শিশুরা যেন সবসময় মশারির নিচে ঘুমায়।
মশা থেকে শিশু ও ছেলেমেয়েদের সুরক্ষিত রাখুন:
- শিশুর নিরাপত্তার্থে মশারি ব্যবহার করুন কিংবা একটি সুরক্ষা স্ক্রিন ব্যবহার করুন যা শিশুর দোলনা, ক্রীব, স্ট্রলার অথবা খেলার জায়গার উপরে ভালোভাবে টানানো থাকে।
- ত্বক ঢেকে রাখতে আপনার শিশুকে লম্বা হাতার জামা, প্যান্ট এবং প্রয়োজনে মোজা পরিয়ে রাখুন।
- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বয়স-উপযুক্ত মশা নিরোধক ব্যবহার করুন৷ ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিরাপত্তার খাতিরে লেবু ইউক্যালিপটাস তেল (OLE) বা প্যারা-মেন্থেন-ডিওল (PMD) তেল-সমৃদ্ধ পণ্যগুলি এড়িয়ে চলুন।
- মশা যেহেতু সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে ভোর ও সন্ধ্যায় তাই ঐ সময় বাইরে করা কাজগুলো কমিয়ে ফেলুন।
দক্ষিণ এশিয়ায় সাধারণত কোন মশাবাহিত রোগ দেখা যায়?
- যেহেতু উষ্ণ আবহাওয়ায় মশা বেশি সক্রিয় থাকে, তাই সেখানে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বেশি। ডেঙ্গু (DENV) নামক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাল সংক্রমণ যেটা এডিস ইজিপ্টি মশা দ্বারা ছড়ায়। এই ধরনের মশারা দিনের বেলা স্বক্রিয় থাকে, এবং ভোরে ও সন্ধ্যা নামার আগে কামড়ায়। ডেঙ্গু, সংক্রমণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে আরও পড়ুন।
- কলেরা প্রধানতঃ পানিবাহিত রোগ যার সংক্রমন বর্ষাকালে ঘটে। কলেরা ‘ভিব্রিও’ নামক ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায় যার উপস্থিতি খাবার বা পানিতে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া পানিতে ধুয়ে যেতে পারে, যা কমিউনিটিতে থাকা মানুষের পানির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উত্সগুলিকে দূষিত করে। এটি একটি অত্যন্ত মারাত্মক রোগ যার গুরুতর লক্ষণ ডায়রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এবং সময়মত চিকিত্সা না করা হলে রোগী কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারাও যেতে পারে। কলেরা সম্পর্কে আরও পড়ুন।