ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য
ডেঙ্গু আক্রান্ত মা কি তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?
ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
ডেঙ্গু কি?
ডেঙ্গু (DENV) ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা এডিস ইজিপ্টি মশা দ্বারা ছড়ায়। এই ধরনের মশারা দিনের বেলা স্বক্রিয় থাকে, এবং ভোরে এবং সন্ধ্যা নামার আগে মানুষকে কামড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে।
- এই ধরনের মশারা ডেটাইম ফিডার যারা দিনে স্বক্রিয় থাকে এবং ভোরে ও সন্ধ্যা নামার আগে মানুষকে কামড়ায়।
ডেঙ্গু কিভাবে সংক্রমিত হয়?
- মশার কামড়: ডেঙ্গু ভাইরাস স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্যান্য ধরণেরও মশার মাধ্যমেও এটি বিস্তার লাভ করতে পারে।
- মশা থেকে মানুষে: ডেঙ্গু সরাসরি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে না। মূলতঃ মশারা সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড়ানোর মাধ্যমে ভাইরাসটি বহন করে এবং, তারা পরবর্তী কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্য মানুষের মাঝে ছড়ায়। সংক্রমিত ব্যক্তিরা উপসর্গযুক্ত (যাদের ডেঙ্গু উপসর্গ আছে) এবং উপসর্গহীন (যাদের উপসর্গ নেই) দুই-ই হতে পারে।
- গর্ভবতী মা থেকে শিশুতে : যদিও ধরে নেয়া হয় যে, ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রাথমিক উৎস মশা, তবে কোন মা গর্ভাবস্থায় বা শিশু জন্মের সময় (মাতৃত্বকালীন) মা’র ভ্রূণে মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। গর্ভবতী মায়ের ডেঙ্গু হলে, শিশু জন্মের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই (প্রি-টার্ম বার্থ) বা কম ওজনের (লো বার্থওয়েট) শিশুর জন্ম হতে পারে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত মা কি তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?
হ্যাঁ, ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন স্তন্যদানকারী মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’র মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। কারন এই ভাইরাস মায়ের দুধের মাধ্যমে ছড়ায় না, তাই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো পুরোপুরি/সম্পূর্ন নিরাপদ। মায়ের বুকের দুধ প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং অন্যন্য রোগ- প্রতিরোধক উপাদান সমৃদ্ধ যা শিশুর স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় সাহায্য করে, বিশেষতঃ ডেঙ্গু সংক্রমনের মতো জটিল সময়েও এটি সমান কার্যকারী।
ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের ৪-১০ দিন পরে দেখা যায় এবং সাধারণত ২-৭ দিন স্থায়ী হয়।
- তীব্র জ্বর (৪০০সেঃ/ ১০৪০ফা’)
- প্রচন্ড মাথাব্যথা
- অরুচি বা বমি বমি ভাব
- তীব্র (টনটনে) ব্যথা বা ব্যথা (চোখে ব্যথা, সাধারণত চোখের পিছনে, হাড়ে বিশেষ করে মেরুদন্ডে ব্যথা)
- ফোলা গ্রন্থি
বাড়িতে মৃদু ডেঙ্গু উপসর্গ রোগীদের যত্ন নেবেন কীভাবে ?
ডেঙ্গু সংক্রমন প্রতিরোধে ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO ) কর্তৃক অনুমোদিত একটি ভ্যাকসিন রয়েছে, যা পূর্বেই ল্যাবরেটরি-নিশ্চিত এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকারী।
মৃদু উপসর্গ বিশিষ্ট ডেঙ্গু রোগীর চিকিত্সা মূলতঃ প্রাথমিক উপসর্গগুলি (যেমন ব্যথা এবং অন্যান্য লক্ষণ) থেকেই শুরু হয়।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: আপনার শরীরে জ্বর বা ডেঙ্গুর যে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পেলে দেরি না করে নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে জরুরি পরামর্শ নেয়া উচিত।
- পানিশুন্যতা রোধ করুন: প্রচুর পরিমাণে পানীয় গ্রহণ করুন এবং পানিশূন্যতার লক্ষণগুলির দিকে বিশেষ নজর দিন। শরীরে পানিশূন্যতা মূলতঃ জ্বর, বমি বা পর্যাপ্ত তরল না গ্রহণ করার কারণে ঘটে থাকে।
- তীব্র জ্বর নিয়ন্ত্রণ করুন: ডেঙ্গুজনিত ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে, অ্যাসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল নামেও পরিচিত) ব্যবহার করুন।
- প্যারাসিটামল সেবন করুন: আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিনের মতো নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ এড়িয়ে চলুন।
পানিশূন্যতার লক্ষণসমূহ কি কি?
- অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত থাকা, মুখ ও ঠোঁটে শুষ্কতা বোধ করা
- শুষ্ক ত্বক যা চিমটি কাটলে ফুলে যায় এমন
- প্রস্রাবের বেগ কমে যাওয়া এবং প্রস্রাব গাঢ় হওয়া
- ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং খিটখিটে অনুভূতি
- মাথাব্যথা
- দ্রুত হার্টবিট এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুত ওঠা-নামা
- নিদ্রালু চোখ
মারাত্মক ডেঙ্গু কি?
ডেঙ্গুর উপসর্গগুলি যখন গুরুতরভাবে প্রকাশ পায় তখন সেটাকে মারাত্মক ডেঙ্গু বলে। এতে রোগীর জীবন হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।তবে যেসব ব্যক্তিরা দ্বিতীয়বারের মত সংক্রমিত হয়েছেন তাদের মারাত্মক ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি। যদি কেউ গুরুতর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেয়া জরুরি।
মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী কী?
গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ সাধারণত রোগীর অসুস্থতার প্রথম ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করে[১]।তবে রোগীর শরীরে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে এটি ভাবার কোন কারন নেই যে, রোগী সেরে উঠছে। লক্ষনগুলি নিম্নরুপ:
- প্রস্রাবে রক্ত, মল বা বমি
- ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩ বার বমি হওয়া
- ক্লান্তি, অস্থিরতা বা খিটখিটে মেজাজ
- সাংঘাতিক পেটে ব্যথা
- শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুত ওঠানামা
- মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- ফ্যাকাশে এবং ঠান্ডা ত্বক
গুরুতর ডেঙ্গু’র লক্ষণ দেখা দিলে, রোগীকে দ্রুত ইমার্জেন্সি (জরুরি সেবা) কক্ষে বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে নিয়ে যেতে হবে।
Relevant resources:
WHO Fact sheet: Dengue and severe dengue
Centers for Disease Control and Prevention – Dengue, Symptoms and treatment
WHO position paper: Dengue vaccine
Centers for Disease Control and Prevention- Caring for a Child or Family Member Sick with Dengue
Average Rating: ☆ ☆ ☆ ☆ ☆ (0 reviews)