Self-care.png

মানসিকভাবে সুস্থ রাখাঃ সযত্ন নির্দেশনা

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ নিতে এবং আপনার স্থিতিস্থাপকতাকে শক্তিশালী করতে আপনি অনেক কিছু করতে পারেন। এই নির্দেশনাগুলো চেষ্টা করুনঃ


আপনার শরীরের জন্য ভাল কিছু করুন - যা আপনার মনের জন্যও ভাল!


আপনার শরীরের যতœ নিন। শারীরিক ব্যায়াম আমাদের ভাল অনুভুতি তৈরী করতে পারে এবং আমাদের শরীরের চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যখন আমরা শারীরিকভাবে শক্তিশালী এবং প্রস্তুত থাকি তখন এটি আমাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক শক্তি দেয়।

প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিনিট সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। আপনাকে একবারে সক্রিয় হতে হবে না। দিনের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপনি আপনার সারাদিনের কার্যকলাপ ভাগ করে নিতে দিতে পারেন। আপনি যদি বাইরে যান, হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা অন্যান্য খেলার চেষ্টা করুন। আপনাকে প্রতিদিন কঠোর ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই- প্রকৃতি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভাল বলে প্রমাণিত।

  • বাড়ীর ভিতরে থাকলে আপনি বাড়ীর কাজের পাশাপাশি বিনোদনমূলক কার্যক্রম ও নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করুন!
  • বন্ধুদের সাথে ব্যায়াম করার মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকতে সাহায্য করবে।
  • আপনি সুবিধামতো স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে পারেন।
  • রাতের ঘুমানোর সময় বজায় রাখুন। কমপক্ষে ৮ ঘন্টা,-আদর্শভাবে ৯ ঘন্টা!
  • এমনকি যদি আপনার দিনটি খারাপ যায় এবং ভাল না লাগে, দাঁত মাজুন, চুল আঁচড়ান এবং পোশাক পরুন।
  • অনুশীলন করুন এবং গভীর শ্বাস নিন -কীভাবে তা খুঁজে বের করুন

আপনার কেমন অনুভুতি হচ্ছে তা জানুন


আপনি কেমন অনুভব করছেন তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভব করা স্বাভাবিক। এক দিনে আপনি দুঃখ, হতাশা, উত্তেজনা এবং ভালবাসা অনুভব করতে পারেন। আপনার অনুভূতিগুলিকে স্বীকৃতি দেয়ার এবং নাম দেয়ার অভ্যাস করার চেষ্টা করুন, বিশেষত যদি তারা অপ্রতিরোধ্য বোধ করতে শুরু করে। কখনও কখনও আপনার অনুভ‚তি লিখতে সাহায্য করতে পারে। আমরা আমাদের অনুভূতি সম্পর্কে যত বেশি সচেতন হব, ততই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো এবং নিয়ন্ত্রণ থেকে থামাতে পারব!


ইতিবাচক চিন্তা, ইতিবাচক অনভূতি


আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে যেভাবে চিন্তা করি তা আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। যখন আমরা শুধুমাত্র নেতিবাচক দিকে মনোনিবেশ করি, তখন আমাদের খারাপ লাগে। যখন আমরা খারাপ বোধ করি, তখন আমরা কেবলমাত্র বিষয়গুলির নেতিবাচক দিকটি দেখতে পারি। এটা একটা ভয়ানক চক্র!

আপনি সর্বদা ইতিবাচক হতে পারবেন না, তবে ভালো কিছু খোঁজার ফলে নেতিবাচক অনুভূতি কমে যায় এবং আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

কার্যকলাপঃ ইতিবাচক চিন্তা // যারা ইতিবাচক চিন্তা করে তারা বলে যে তারা সুখী, কম উদ্বিগ্ন এবং কম দুঃখ বোধ করে। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় ব্যয় করুন এবং কেন সব ঠিকঠাক চলছে তার কারণগুলি চিন্তা করুন এবং লিখুন। কমপক্ষে ৩টি বিষয় সনাক্ত করার চেষ্টা করুন। এটি সহজ হতে পারেঃ "আজ সকালে, আমার শিক্ষক আমার প্রশংসা করেছেন", "আমার বন্ধু দেখিয়েছে যে তারা যতœ করছে", বা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাঃ "আমি পরীক্ষায় পাস করেছি!" কেন এই সব ভাল হয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন - এবং আপনি যে সমস্ত চেষ্টা করেছেন তা স্বীকার করুন!


উদারতা অনুশীলন


নিজেকে বলুন যে আপনি কেমন অনুভব করছেন, ভাল ও খারাপ দিন কাটাতে, ভুল করা এবং নিখুঁত না হওয়া ঠিক আছে। সর্বদা "সেরা হতে" নিজের উপর চাপ দেবেন না। আপনি যখন কঠিন আবেগ অনুভব করেন, নিজের প্রতি সদয় হন, নিজেকে বর্ণনা করার জন্য নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করবেন না।"ইতিবাচক স্ব-কথোপকথন' ব্যবহার করুন, যেমনঃ

"আমি এই মুহুর্তে এটিকে কঠিন মনে করছি, এটি ঠিক আছে কারণ আমি এটির মধ্যে কাজ করছি এবং এটি পরিবর্তন হবে",

"কিছু খারাপ ঘটলে আমার দুঃখ পাওয়া ঠিক আছে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া"।

কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার শক্তি এবং পূর্ববর্তী সাফল্যগুলি মনে রাখুন (যদি আপনি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা অনুশীলন করেন তবে এটি করা সহজ হবে 😊)।

আপনি কি জানেন যে অন্যদের প্রতি সদয় হওয়া আমাদেরও সুখী হতে সাহায্য করে? অন্যদের সাহায্য করা, প্রশংসা করা বা উদার হওয়া আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে। একইভাবে, যখন আমরা 'কৃতজ্ঞতা' অনুভব করি এবং অনুশীলন করি - আমাদের প্রতি দেখানো উদারতার কাজগুলিকে স্বীকৃতি দেয় - এটি আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে সাহায্য করে!


অস্বাস্থ্যকর পথ এড়িয়ে চলুন


যখন আপনি কঠিন অনুভূতি অনুভব করেন, তখন নিজের যতœ নেয়ার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রলোভন এড়িয়ে চলুনঃ

  • মদ পান,
  • তামাক বা গাঁজা সেবন,
  • বেশি খাওয়া,
  • নিজেকে বন্ধু এবং পরিবার থেকে দূরে লুকিয়ে রাখা, অথবা
  • বিপজ্জনক সম্পর্ক এবং কার্যকলাপে জড়িত হওয়া।

এই কার্যক্রমগুলো আপনার সমস্যাগুলিকে বাড়িয়ে তুলবে, সমাধান দিবে না।


সংযোগ! সংযোগ! সংযোগ!


যতটা সম্ভব পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। যখন আমরা খারাপ অনুভব করি, তখন আমরা প্রায়ই অন্য ব্যাক্তিদের থেকে দূরে লুকিয়ে থাকতে চাই, কিন্তু এটি ভাল ধারণা নয়। পরিবর্তে চেষ্টা করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি সঠিক ব্যাক্তিদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন: যারা আপনাকে সমর্থন করে এবং আপনি বিশ্বাস করেন। তাদের সাথে চলাফেরা নিশ্চিত করুন। আপনি বেশি কিছু বলতে না চাইলেও, আমাদের পছন্দের এবং বিশ্বাস করা ব্যাক্তিদের সাথে থাকা বা একসাথে একটি কার্যকলাপ করা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সাহায্য করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেল, ফোন ব্যবহার করুন বা চিঠি লিখুন। যখন আপনি একটি সংযোগ খুঁজে পাচ্ছেন না, আপনি একসাথে অতিবাহিত হওয়া সময় সম্পর্কে ভাবুন।

কার্যকলাপঃ আপনার নেটওয়ার্ক// এই মুহূর্তে আপনার জীবনে পাঁচ জনের কথা ভাবুন। তারা কীভাবে আপনাকে নিজের সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে? আপনি তাদের সম্পর্কে কেমন অনুভব করেন? ভাবুন তাদের মধ্যে কে সবসময় আপনাকে ভালো বোধ করে যখন আপনি তাদের দেখেন বা যাদের সাথে আপনি সবচেয়ে মজা করেন। একজন ব্যক্তি আমাদের জীবনে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে, যাদের সাথে আমরা মজা করি বা খেলাধুলা করি, অন্যদেরকে আমরা আস্থায় রাখতে চাই, অন্যরা হয়তো আমাদের স্কুলের কাজে সাহায্য করতে পারে। চেষ্টা করুন এবং আপনার নেটওয়ার্কে কে আছে তা খুঁজে বের করুন।


সমস্যা মোকাবেলা


সমস্যাগুলি আমাদের মনে বড় হতে পারে, বিশেষ করে যখন আমরা সেগুলি উপেক্ষা করি। যখন সমস্যাগুলি বড় হয়, আমরা সেগুলির সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষমতা কম অনুভব করতে শুরু করি এবং এটি তখন আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। আমাদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

আপনি যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন এবং কীভাবে সমাধান করবেন তা না জানেন, তাহলে এই সহজ পদক্ষেপগুলি চেষ্টা করুনঃ

১. সমস্যাটি লিখুন যতটা সম্ভব নির্দিষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত।

২. ব্রেনস্টর্ম বা মুক্ত চিন্তার ঝড় প্রথমে, সমস্যার যতটা সম্ভব সমাধানের কথা ভাবুন। এই পর্যায়ে সমাধানগুলি ভাল না খারাপ হলো চিন্তা করবেন না। তারপরে, আপনি নিজে কী করেন এবং আপনাকে সাহায্য করতে পারে এমন ব্যাক্তিদেরও চিন্তা করুন। নির্দেশনাঃ সমাধান নিয়ে আসতে আপনার অসুবিধা হলে, কোনো বন্ধু যদি আপনার পরামর্শ চায় তাহলে আপনি তাকে কী বলবেন তা বিবেচনা করুন

৩. সিদ্ধান্ত নিন এবং সম্ভাব্য সমাধানের তালিকা থেকে সহায়ক কৌশল বেছে নিন, সেগুলি বেছে নিন যা সমস্যা মোকাবেলায় সবচেয়ে সহায়ক। নির্দেশনাঃ সবচেয়ে ভাল/সবচেয়ে সহায়ক কৌশল হল সাধারণত যা আপনার পক্ষে সম্পদের সাথে মেলানো সম্ভব এবং আপনার এবং অন্যদের জন্য খুব কম অসুবিধা হয়

৪. কর্ম পরিকল্পনা আপনি কিভাবে এবং কখন সমাধান (গুলি) সম্পাদন করবেন তার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন; আপনি কখন এটি করতে পারবেন- দিন এবং সময় বেছে নিন। পরিকল্পনাটি লিখে রাখুন। নির্দেশনাঃআপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের একজন বন্ধুকে বলা আপনার এটি বাস্তবায়নের সম্ভবনা বাড়িয়ে দেবে!

৫. পর্যালোচনা করুন কী করা হয়েছে এবং এটি মূল সমস্যার উপর কী প্রভাব ফেলেছিল, যদি এটি কাজ না করে তবে কেন তা বোঝার চেষ্টা করবেন না। সমাধানের আসল তালিকায় ফিরে যান এবং দেখুন যে অন্য কোনও জিনিস আছে কিনা আপনি চেষ্টা করতে পারেন।

৬. সমস্যা সমাধানের ইতিবাচক প্রচেষ্টায় সফল হোক বা না হোক নিজেকে অভিনন্দন জানান!

নির্দিষ্ট সহায়তার জন্য, নীচের বিষয়গুলির মাধ্যমে আরও জানুনঃ


সাহায্য নিন এবং কথা বলুন


কঠিন অনুভূতি, চাপ, ভয় বা দুঃখের সাথে একা একা মোকাবেলা করা সবসময় সহজ নয়। কখনও কখনও এই সমস্ত উপদেশ এবং স্ব-যতœ নির্দেশনা অনুসরণ করা সত্তে¡ও, আমাদের অনুভূতি আমাদের অভিভূত করতে পারে। আমরা হতাশাগ্রস্থ এবং মরিয়া হয়ে উঠতে পারি। আমরা সাধারণত যে জিনিসগুলি উপভোগ করি তা করা বন্ধ করে দিতে পারি এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে সম্পূণরুপে সক্ষম বোধ করতে পারি এবং সম্ভবত নিজেদেরকে আঘাত করার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে পারি বা জীবন আর বেঁচে থাকার যোগ্য নয় বলেও ভাবতে পারি। এই চিন্তাগুলি অস্বাভাবিক নয় এবং সেগুলি অনুভব করতে আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত নয়, তবে আপনি যদি নিজেকে এইভাবে ভাবতে দেখেন তবে আপনার সাহায্য নেওয়া এবং আপনি বিশ্বাস করতে পারেন এমন কারো সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার সাথে কথা বলার মতো কেউ না থাকে তবে আপনার কাছাকাছি পরিসেবাগুলি সন্ধান করুন যা সাহায্য করতে পারে।

পূর্ববর্তী পরবর্তী